![]() |
নির্বাচন কমিশন (ইসি)। |
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করতে গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইসিকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো।
গতকাল রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, গতকাল ইসির সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লিখিত সময়ে প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
এর আগে বিভিন্ন ধরনের ‘চ্যালেঞ্জ’ থাকলেও আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার তালিকা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটার মতো বড় কাজগুলো আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি। এসব কাজের অনেকগুলো ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে।
নির্বাচন আয়োজনে যে খরচ, তা বরাদ্দ দিয়ে থাকে সরকার। নির্বাচনের বাজেট নিয়ে গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের জন্য যে অর্থ লাগবে, তা দেওয়া হবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে এদিন বৈঠক করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বাচনের আগে পুলিশ সুপার (এসপি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হবে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের পরদিন গতকাল ইসি, অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা সামনে এল।
গত মঙ্গলবার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে’ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠানো হবে, যেন কমিশন আগামী রমজান মাস শুরুর আগে ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গতকাল দুপুর নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, তাঁরা আশা করছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুতই চিঠি পাবে ইসি। অবশ্য ইসি আরও আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও ইসি তার প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে।
সিইসি জানান, যেদিন ভোট গ্রহণ করা হবে, তার মাস দুয়েক আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে ইসি
সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন নির্বাচনের চলমান প্রস্তুতির অগ্রগতি ও কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন। নির্বাচন আয়োজনের জন্য বড় কাজগুলোর মধ্যে আছে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ইত্যাদি। সিইসি জানান, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি।
সিইসি বলেন, ভোটার তালিকা হয়ে যাচ্ছে। ৩১ আগস্টের মধ্যে ভোটার তালিকা (বাদ পড়া ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও মৃত ভোটারের নাম কর্তন) চূড়ান্ত হবে। ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে ভোটের আগে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। ওই সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযুক্ত হবেন, তাঁরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
সিইসি জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। ১০ আগস্ট পর্যন্ত দাবি আপত্তি নেওয়া হবে। এরপর শুনানি করে সীমানা নির্ধারণ চূড়ান্ত করা হবে। প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও চলছে, এটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা সৃষ্টি করা, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা, এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করার মতো বিষয়গুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি। তবে তাঁরা আশা করছেন, আগামী নির্বাচন আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে। সামনে ইসির কর্মকাণ্ড দেখে রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হবে। তিনি জানান, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করবে ইসি।
সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। আরও কয়েক মাস সময় আছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নির্বাচনসংক্রান্ত বেশ কিছু আইনবিধি সংস্কারের সুপারিশ করেছে। ইসি নিজেও এসব বিষয় পর্যালোচনা করেছে। নির্বাচনী আইন, বিশেষ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও কয়েকটি নীতিমালা সংশোধন নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক করবে ইসি।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, এসবের বাইরে নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে আছে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ব্যালট পেপার ছাপানোর মতো কিছু রুটিন কার্যক্রম। যাঁরা প্রশিক্ষণ দেবেন, (প্রশিক্ষক) তাঁদের প্রশিক্ষণ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ব্যালট পেপার ছাপা হয় তফসিল ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর। আর ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে নীতিমালা সংশোধন করেছে ইসি। সাধারণত যেসব প্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সেগুলোই কেন্দ্র হিসেবে রাখা হবে। ভোটের কিছুদিন আগে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গ
গতকালের ব্রিফিংয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ইসি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাখ্যায় সিইসি বলেন, অংশগ্রহণমূলক বলতে তিনি বোঝাতে চান ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন। ইসির মূল ‘ফোকাস’ ভোটার। আগের নির্বাচনে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশ নিয়েছিল। কিন্তু ভোটাররা কি এসেছিলেন, নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক ছিল?
অন্য প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড এখন নিষিদ্ধ আছে। বিচার শেষ হোক। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা ভোট দিতে পারবেন, এতে কোনো অসুবিধা নেই।
আওয়ামী লীগের নেতারা আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এই প্রশ্নের জবাব তিনি এখন দিতে চান না।