জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে বেশ কিছু কাঠামোগত উদ্যোগ ও সংস্কার হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। বৈধ পথে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ায় শক্তিশালী হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনতে দরকার কঠোর নজরদারি।
অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটে জর্জরিত ব্যাংক খাতকে টেনে তুলতে গত বছর আগস্টে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে দেয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। এরপর ব্যাংকিং খাতে নানা সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আসে ব্যাপক রদবদল, দেশি-বিদেশি ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয় তিনটি টাস্কফোর্স। দুর্বল ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে, তারল্য সহায়তা দিয়ে এগিয়ে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘এক বছরে ব্যাংকিং সেক্টরের যে প্রকৃত চিত্র, সেটা হাল বা বেহাল হোক; তা জাতির কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। প্রশাসনের বিপক্ষে গেলেও আমরা প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছি।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ডলারের বাজারে স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রবাসীদের আন্তরিকতায় ও হুন্ডি কমে যাওয়ায় বাড়তে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রিজার্ভে আসে গতি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, খেলাপির প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসায়, জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। যা আদায় এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
অর্থনীতিবিদ ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তো দেখি না কোনো ঋণখেলাপি বিচারের সম্মুখীন বা জেলে গিয়েছে, কিংবা কারও টাকা–পয়সা আদায় করতে পেরেছে। যাদের কারণে ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত তাদের আরও জোরোশোরে ধরতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ ড. এম কে মুজেরী বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা এখন সময়ের দাবি।’
স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার নামে নতুন অধ্যাদেশ জারির কার্যক্রম চলছে। তবে সংস্কারের সুফল পেতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।