পর্যটন বাড়াতে নেপাল আগামী দুই বছরের জন্য হিমালয়ের ৯৭টি পাহাড় বিনা খরচে আরোহণের সুযোগ দিচ্ছে। দেশের দুর্গম ও কম পরিচিত অঞ্চলে ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ঘোষণাটি এসেছে এমন সময়ে, যখন বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে (উচ্চতা ৮,৮৪৯ মিটার) আরোহণের মৌসুমি ফি সেপ্টেম্বর থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ১১ হাজার ১৭০ পাউন্ড) করা হচ্ছে—প্রায় এক দশকের মধ্যে যা প্রথম বৃদ্ধি।
নেপালের পর্যটন বিভাগ জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য দেশের “অজানা পর্যটন সম্ভাবনা ও গন্তব্যগুলোকে” তুলে ধরা। পর্বতারোহণ নেপালের বড় আয়ের উৎস, যেখানে বিশ্বের ১০টি সর্বোচ্চ পর্বত অবস্থিত। শুধু গত বছরেই দেশটি এ খাত থেকে আয় করেছে ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার, যার তিন-চতুর্থাংশের বেশি এসেছে এভারেস্ট থেকে।
বিনা ফিতে আরোহণযোগ্য শৃঙ্গগুলো নেপালের কার্নালি ও সুদুরপশ্চিম প্রদেশে অবস্থিত। এসব শৃঙ্গের উচ্চতা ৫,৯৭০ মিটার থেকে ৭,১৩২ মিটার পর্যন্ত। দুই প্রদেশই নেপালের সবচেয়ে দরিদ্র ও অনুন্নত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে।
নেপালের পর্যটন বিভাগের মহাপরিচালক হিমাল গৌতম বলেন, “এসব পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও এখানে পর্যটক ও পর্বতারোহীর সংখ্যা খুব কম। যাতায়াত অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বলেই এমন হয়। আমরা আশা করি, নতুন বিধান এ পরিস্থিতি বদলাবে।”
তিনি আরও বলেন, “এগুলো কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে, আয় বাড়াতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করতে পারে।” তবে কর্তৃপক্ষ এই দুর্গম অঞ্চলে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনা করেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। একইসঙ্গে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পর্যটক চাপ সামলাতে পারবে কি না, সেটাও অজানা।
গত দুই বছরে মাত্র ৬৮ জন পর্বতারোহী এসব ৯৭টি শৃঙ্গে অভিযান চালিয়েছেন। বিপরীতে, ২০২৪ সালে শুধু এভারেস্টের জন্যই ৪২১টি আরোহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এভারেস্টে অতিরিক্ত ভিড়, পরিবেশগত ক্ষতি ও একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট এভারেস্টসহ কয়েকটি শৃঙ্গে আরোহণের অনুমতির সংখ্যা সীমিত করতে সরকারকে নির্দেশ দেয়। আদালত জানিয়েছিল, “পাহাড়ের সক্ষমতাকে সম্মান জানাতেই হবে।”
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকার ৩৬% হারে ফি বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। এভারেস্টে প্রধান মৌসুমের বাইরে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) উঠতে এখন খরচ হবে ৭,৫০০ ডলার, আর ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে খরচ হবে ৩,৭৫০ ডলার।
এছাড়া নেপালের সংসদে নতুন একটি আইন নিয়ে আলোচনা চলছে, যেখানে বলা হয়েছে—এভারেস্টে উঠতে চাইলে প্রথমে নেপালে অন্তত ৭,০০০ মিটার উচ্চতার একটি শৃঙ্গ আরোহণ করতে হবে। ফলে কার্নালি ও সুদুরপশ্চিম প্রদেশের শৃঙ্গগুলোকে “আদর্শ প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র” হিসেবে দেখা হচ্ছে।