হালনাগাদ খসড়া তালিকা প্রকাশ, নতুন ভোটার ৪৫ লাখ দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ * নতুন ভোটাররা আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন

HEALTH CARE ADVICE
By -
0


 ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে হালনাগাদ কার্যক্রম শেষে ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২০২৫ সালের তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ৪৫ লাখ ৭১ হাজার ২১৬ জন নতুন ভোটার (যাদের জন্ম ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে)। আর মৃত ও অযোগ্য ভোটার হিসাবে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জনের নাম। খসড়া তালিকা অনুযায়ী, সব মিলিয়ে এখন (৩০ জুন পর্যন্ত) দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০। নতুন যুক্ত ভোটারদের প্রায় সবাই আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন।

রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সচিব আখতার আহমেদ খসড়া ভোটার তালিকার এ তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। হালনাগাদ কার্যক্রমের তথ্য একটি সম্পূরক তালিকায় সংশ্লিষ্ট সব উপজেলা/থানা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া তালিকা নিয়ে কারও কোনো দাবি বা আপত্তি থাকলে তা আগামী ১২ দিনের মধ্যে জানাতে হবে। দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

জানা গেছে, হালনাগাদ কার্যক্রমে যেসব ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তার মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। এবার ২৭ লাখ ৭৬২ জন নারী ভোটারের নাম খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর পুরুষ ভোটার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন ১৮ লাখ ৭০ হাজার ২০৩ জন। হিজড়া পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন ২৫১ জন।


হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, ‘নতুন বড় সংখ্যক ভোটার হচ্ছেন। তারা কোন কোন ধাপ অতিক্রম করে ভোটার হচ্ছেন তা বিস্তারিত না জেনে বলা মুশকিল। তবে আমরা নতুন ভোটারদের স্বাগত জানাই। প্রজন্মের এই ভোটাররাই ভবিষ্যতে জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন। এরা অধিকার বঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ। এরা দেখেছে, শুনেছে, যখন দেশে ভঙ্গুর কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তখনই বিএনপি এগিয়ে এসেছে। সে অবস্থা থেকেই দেশকে ‘সারভাইবালে’ নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন সংস্কার প্রস্তাব আমরাই প্রথমে দিয়েছি। এসব বিষয়ে আমরা তরুণ নতুন ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। অবশ্যই তারা এসব বিষয় বিবেচনা করবেন।’

ভোটার তালিকার খসড়া নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘ত্রুটিযুক্ত ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত করতে হবে এটাই মূল কথা। এখানে যদি কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, যেমন মৃত ভোটার আছে, দ্বৈত ভোটার আছে, এগুলো মৌলিক ত্রুটি এগুলো দূর করতে হবে। বিগত সময়ে ভোটার তালিকায় দেখা গেছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফেক ভোটার আছে। এগুলো দূর করা হয়েছে কিনা, তা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব। আবার নতুন কোনো ফেক ভোটার হয়েছে কিনা তাও যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। কমিশনের প্রতি আমাদের আবেদন তারা যেন নিখুঁতভাবে এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করে। কারণ নির্ভুল ভোটার তালিকা করার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূচনা হয়।’ জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তারাও আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। ৩১ অক্টোবর বা তারপরে তরুণ ভোটারদের সম্পূরক তালিকা প্রকাশ করা হবে। সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে ভোটারের সংখ্যা আরও বাড়বে।

আইন অনুযায়ী, চলতি বছরের ২ মার্চ প্রথম ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল ইসি, যেখানে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। এরপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তির কাজ করা হয়। ১০ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি জানানো যাবে ২১ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্তি, মৃত্যুজনিত বা অযোগ্য ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়া, ভোটার স্থানান্তর এবং কোনো ত্রুটি সংশোধনের জন্য আবেদন করা যাবে। এই আবেদনগুলো ২৪ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। এরপর ৩১ আগস্ট প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারাও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। নতুন আইনে নবীন ভোটারদের এক বছর অপেক্ষা না করিয়ে এই সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে এ বছর মোট তিন দফায় ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। প্রথমটি ২ মার্চ, দ্বিতীয়টি ৩১ আগস্ট এবং তৃতীয়টি ৩১ অক্টোবর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইন অনুযায়ী, চলতি বছর হালনাগাদের যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তা অন্তর্ভুক্ত করে হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা করা হয়েছে। তবে ইসি যেকোনো সময় ভোটার তালিকা সংশোধন করতে পারে।

ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ২ জানুয়ারি আগের বছরের তথ্য নিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করে ইসি। তালিকা নিয়ে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ২ মার্চ প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা। আইনে হালনাগাদের বাইরে ইসিকে যে কোনো সময় ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষমতাও দেওয়া আছে। কোনো নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়কাল ছাড়া অন্য যে কোনো সময় প্রয়োজনে তালিকা সংশোধন করতে পারে ইসি।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)